সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চন্ডীদাস

বড়ু চণ্ডীদাস
মধ্যযুগীয় বাংলাকাব্য শ্রীকৃষ্ণকীর্তন -এর রচয়িতা। আনুমানিক ১৩৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সম্ভবত ১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ধারণা করা হয়, তাঁর আসল নাম ছিল অনন্ত এবং কৌলিক উপাধি বড়ু, গুরুপ্রদত্ত নাম চণ্ডীদাস। চণ্ডীদাস নামে একাধিক কবির নাম পাওয়া যায়। বড়ু চণ্ডীদাস, দ্বিজ চণ্ডীদাস, দীন চণ্ডীদাস ও চণ্ডীদাস। তবে বিভিন্ন গবেষকদের মতে বড়ু চণ্ডীদাস শ্রীকৃষ্ণচরিতের রচয়িতা। রচনাকাল সঠিকভাবে নির্ণীত না হলেও এটিকে প্রাকচৈতন্য যুগের (খ্রিস্টীয় ১৪শ শতক) মনে করা হয়। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে চর্যাপদের পরেই শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের স্থান। ১৩১৬ বঙ্গাব্দে (খ্রি. ১৯০৯) বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ বাঁকুড়া জেলার বনবিষ্ণুপুরের কাঁকিল্যা গ্রাম নিবাসী দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নিকট থেকে এর  পুথি আবিষ্কার করেন। পুথিটির মাঝখানের এবং শেষের কয়েকটি পত্র না থাকায় এর নাম জানা যায়নি। তাই এর বিষয়বস্ত্ত কৃষ্ণলীলাবিষয়ক বলে নাম রাখা হয়েছে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। ১৩২৩ বঙ্গাব্দে (১৯১৬) এই নামে বসন্তরঞ্জনের সম্পাদনায়  বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে পুথিটি মুদ্রিত হলে গবেষক মহলে আলোড়নের সৃষ্টি হয় এবং  বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়। পুথিটি থেকে  বাংলা লিপির বিবর্তন সম্পর্কেও অনেক ধারণা পাওয়া যায়।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন গীতি-আলেখ্য। রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলা এর বিষয়বস্ত্ত। মোট ১৩ খন্ডে ৪১৮টি পদে এটি  বিন্যস্ত। খন্ডগুলি: জন্মখন্ড, তাম্বূল খন্ড, দানখন্ড, নৌকাখন্ড, ভারখন্ড, ছত্রখন্ড, বৃন্দাবন খন্ড, কালীয়দমন খন্ড, যমুনা খন্ড, হারখন্ড, বাণখন্ড, বংশীখন্ড ও বিরহখন্ড (রাধাবিরহ)। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের মূল কাহিনী ভাগবত থেকে নেওয়া হলেও এতে বিভিন্ন  পুরাণ এবং জয়দেবের গীতগোবিন্দের  প্রভাব রয়েছে। কাব্যের প্রধান চরিত্র তিনটি কৃষ্ণ, রাধা ও বড়াই (দূতী)। কাব্যের চরিত্র-মধ্যে ঘাত-প্রতিঘাত আছে; বাক-বিতন্ডা, রাগ-দ্বেষ ইত্যাদি আছে। ফলে কাব্যটি গতিশীল ও নাট্যরসাশ্রিত হয়েছে। এতে গীতিরসেরও উপস্থিতি লক্ষণীয়। কাব্যটি শৃঙ্গাররসপ্রধান এবং ঝুমুর গানের লক্ষণাক্রান্ত। এটি পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে রচিত।   এই গ্রন্থটি ১৩২৩ বঙ্গাব্দে কলকাতা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চন্ডীদাস ও ঞ্জান দাস

প্রশ্নোত্তর – ১] জ্ঞানদাসের জন্ম কবে ? উঃ ১৫৩০ ২] চণ্ডীদাসের জন্ম কোথায় বলে প্রমাণিত ? উঃ বাঁকুড়ার ছাতনায় ৩] কোন গ্রন্থে জ্ঞানদাসের নাম পাওয়া যায় ? উঃ চৈতন্যভাগবত ৪] চণ্ডীদাস কোন দেবীর উপাসক ছিলেন ? উঃ বাশুলী ৫] গ্রাম বাংলার কবি কে ? উঃ চণ্ডীদাস ৬] চণ্ডীদাসের পদগুলিকে ‘রুদ্রাক্ষের মালা’ বলেছেন কে ? উঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ৭] পদাবলী চণ্ডীদাসের পিতার নাম কী ? উঃ দূর্গাদাস বাগচী ৮] গোপালবিজয় কাব্যটি কার লেখা ? উঃ রায়শেখর ৯] “পদকল্পতরুতে” কতগুলি পদ সংকলিত হয়েছে ? উঃ ২৪০ জন কবির ৩০০০ বেশী ১০] চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য কে ? উঃ জ্ঞানদাস ১১] চণ্ডীদাসের জন্মস্থান কোথায় ? উঃ নানুর ১২] “রসকল্পবলী” কার রচনা ? উঃ রামগোপালের ১৩] ছোট বিদ্যাপিতি হিসাবে কে পরিচিত ? উঃ কবিরঞ্জন ১৪] “রাইয়ের দশা সখির মুখে” – কার কোন পর্যায়ের পদ ? উঃ চণ্ডীদাস, মাথুর পর্যায় ১৫] চণ্ডীদাস সম্পর্কে সর্বপ্রথম বিস্তারিত আলোচনা কে করেন ? উঃ রামগতি ন্যায়রত্ন ১৬] পদরত্নাবলীতে চণ্ডীদাসের কটা পদ আছে ? উঃ ১৪ ১৭] অষ্টাদশ শতাব্দীর একজন বৈষ্ণব কবির নাম কি ? উঃ রাধামোহন ...

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস(বিদ্যাপতি)

কবি বিদ্যাপতির জন্ম দ্বারভাঙা জেলার বিসফী গ্রামের এক বিদগ্ধ ব্রাহ্মণ পরিবারে। তার কৌলিক উপাধি ঠক্কুর বা ঠাকুর। বংশপরম্পরায় তারা মিথিলার উচ্চ রাজকর্মচারী ছিলেন। শস্ত্র, শাস্ত্র, রাজ্যশাসন ও সংস্কৃতি সাহিত্যে তাদের দান বিশেষরূপে উল্লেখযোগ্য। তিনি যে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন ছয়জন রাজা ও একজন রানীর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ থেকেই তার স্বীকৃতি মেলে। কবি স্মৃতিকার রাজনীতিবিদ ব্যবহারবিদ ও আখ্যান লেখক হিসেবে তিনি সুপরিচিতি। তার রচনাবলির মধ্যে রয়েছে কীর্তিলতা ভূপরিক্রমা, কীর্তিপতাকা, পুরুষ পরীক্ষা, শৈবসর্বস্বসার, গঙ্গাবাক্যাবলি, বিভাগসার, দানবাক্যাবলি, লিখনাবলি, দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী। তিনি প্রায় আট শ’ পদ রচনা করেন। জীবৎকালে বিখ্যাত কবি ও পণ্ডিতরূপে তার প্রতিষ্ঠা ছিল। মিথিলার কবি হলেও অমর পদাবলি অচিরেই সমগ্র বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মিথিলার উপভাষা ব্রজবুলিই তাঁর পদাবলির বাহন। এই ভাষার ধ্বনি-মাধুর্য ও সঙ্গীতময়তা বাংলা কাব্যকে, বিশেষ করে বৈষ্ণব পদাবলিকে সমৃদ্ধ করেছে। বিষয়ের লালনে, ধ্বনি, শব্দ, অলঙ্কার প্রভৃতির ব্যবহারে তার নাগরিক বৈদগ্ধ ও মননশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি চৈতন্য-পূর্ববর্তী কবি। তাই ত...